নতুন ঝালে চই ঝাল

প্রকাশঃ অক্টোবর ২৫, ২০১৫ সময়ঃ ১২:৩৭ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:৩৮ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

choijalঅপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে স্রষ্টার অশেষ রহমতময় সৃষ্টি। বাংলার অপরূপ এই সৌন্দর্যের বেশির ভাগ জায়গা দখল করে নিয়েছে আমাদের গাছ-গাছালি। একদা এক সময় আমাদের দেশের গাছ থেকে তৈরি হত ঔষধ, ছিল এদেশের কবিরাজদের অনেক নাম-ডাক। কিন্তু দেশের বনজ সম্পদ হারানোর সাথে সাথে আজ সেই কীর্তি প্রায় ম্রিয়মান, কিন্তু তাদের কিছু কীর্তি এখনো ধরে রেখেছে বাংলার কিছু অঞ্চলের কৃষক। আজ আমরা তেমনি একটি ঔষধি গাছ নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি।

চইঝাল গাছ হয়তো অনেকে চেনেন না তাদের জানার জন্য বলা যায় চইয়ের বোটানিক্যাল(Scientific name) নাম Piper Chaba , পরিবার(family) Piperaceae, জেনাস(genus) Piper এবং স্পেসিস(species) হলো Chaba।

এক অমূল্যসম্পদ লতাজাতীয় গাছ চইঝাল বা চুইঝাল লতা। প্রাকৃতিকভাবে এটি ভেষজগুণ সম্পন্ন গাছ। কাজে লাগাচ্ছেন কৌশলের মধ্যে। চইঝাল গ্রীষ্মঅঞ্চলের লতাজাতীয় ফসল। দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশে খুব ভালোভাবে জন্মে। বিশেষ করে ভারত, নেপাল, ভুটান, বার্মা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড চই চাষের জন্য উপযোগী। আমাদের কিছু আগ্রহী চাষি নিজেদের কারিশমা দিয়ে এটিকে এখন প্রাত্যাহিকতার আবশ্যকীয় উপকরণের মধ্যে নিয়ে এসেছেন। অন্য গাছের সাথে আশ্রয় নিয়ে এরা বেড়ে উঠে। মোটামটি সব গাছের সাথেই বাড়ে। এর মধ্যে আম, মেহগিনি, সুপারি, শিমুল গাছে ভালো হয়। তবে আমে গাছে বেড়ে ওঠা চই সবচেয়ে বেশি ভালোমানের হয়।

আপনি যদি খুলনা- যশোর কিংবা এর আশে পাশের কোন এলাকার হাটে যান তবে দেখতে পাবেন অনেকেই কিছু ডাল নিয়ে বসে আছে। অথবা আপনি কারো বাড়িতে খেতে গেলে হরেক রকম সুস্বাদু খাবারের সাথে হয়ত কিছু ডাল দেখতে পেলেন। এতে অবাক হবার কিছুই নাই। এগুলোই চই ঝাল বা চুই ঝাল নামে পরিচিত। খুলনাতে বা আশে পাশের হিন্দু পরিবারের রান্নায় এর বিকল্প নেই। এক্তি মজার বিষয় হল এটি স্বাদে ঝাল হলেও এর ঝাল বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মৌসুমি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় স্থানীয় অভিযোজন বা খাপ খাওয়ানোর কৌশল হিসেবে এটি নাজিরপুর ল্যাব-২ প্রকল্প এলাকায় চাষ করা হয়েছে। কাটিং দ্বারা এর বংশবিস্তার করা হয়। বর্ষাকালে চাষের উপযুক্ত সময়। মাটিতে কাটিং লাগাতে হয়। কাটিং থেকে নতুন চারা বের হলে তা কোন ফল বা কাঠ গাছে দিয়ে দিলে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠে। স্থানীয় চাষিরা জানান আম, শিমুল গাছের সাথে ভাল ফল পাওয়া গেছে। সাধারনত আম, সুপারিসহ কাঠ জাতীয় গাছের গুঁড়া থেকে ১২-১৫ ইঞ্চি দূরে গর্ত করে চুই গাছের কাটিং লাগান হয়। গর্তের মধ্যে কিছু গবর, গোয়াল ঘরের ময়লা, ৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০ গ্রাম টি এস পি, ৫০ গ্রাম পটাশ দিয়ে গর্তে ও মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ৭ দিন রেখে কাটিং লাগাতে হয়। গর্তে একটি খুঁটি কাত করে বড় গাছের সাথে বেঁধে দিলে ৩০-৪০ দিনের মাঝে তা গাছের কাণ্ডের সাহায্যে উপরে উঠে যায়। এভাবে চুই গাছ বাড়তে থাকে।choi-jhal

উপাদানঃ

চই ঝালে দশমিক ৭ শতাংশ সুগন্ধী তেল রয়েছে।অ্যালকালয়েড ও পিপালারটিন আছে ৪-৫ শতাংশ। পরিমাণমত গ্লুকোজ,ফ্রুক্টোজ,গ্লাইকোসাইডস,মিউসিলেজ,সিজামিন,পিপলাসটেরল প্রভৃতিও থাকে এতে।এর কাণ্ড,শিকড়,পাতা,ফুল,ফল,সব ভেষজ গুণসম্পন্ন।শিকড়ে থাকে দশমিক ১৫ থেকে দশমিক ১৩ শতাংশ পিপারিন। এসব উপাদান মানবদেহের জন্য খুব উপকারী।

শরীরের যত্নে চই ঝালঃ

চই গাছের ভেষজগুণ অসামান্য এবং বিস্তৃত। চইলতার শিকড়, কাণ্ড, পাতা, ফুল ফল সব অংশই ভেষজগুণ সম্পন্ন এবং গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ পুরো গাছ উপকারি। মানব শরীরের বিভিন্ন রোগ নিবারনে এটি অনেক কার্যকর।

১. গ্যাস নিবারণ,কোষ্ঠকাঠিন্য তাড়াতে,রুচি বাড়াতে,ক্ষুধামন্দা দূর করতে কার্যকর ঔষধি এটা। অর্থাৎ পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহ সারাতে খেতে পারেন চই ঝাল।
২. হিক্কার দমকে যায় যায় অবস্থা? একে নিয়ণ্ত্রণে আনতে চই ঝালের সঙ্গে মধু মিশিয়ে চিবুতে থাকুন। হেচঁকি কমে যাবে।
৩. সর্দির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে মাত্র এক ইঞ্চি পরিমাণ চই ঝালের সঙ্গে আদা পিষে খেতে পারেন। সর্দি পালাবে।
৪. স্নায়ুবিক উত্তেজনা ও মানসিক অস্থিরতা প্রশমন করে ঘুম আনতে সহায়তা করে চই ঝাল।নিয়ম করে খেয়ে দেখুন,ঘুম বেড়ে যাবে।
৫. হাঁপানি,শ্বাসকষ্ট,কাশি,কফ,ডায়রিয়া,রক্তস্বল্পতা,শারীরিক দু্র্বলতা কাটাতে অথবা শরীরের ব্যথা সারাতে খেয়ে যান চই ঝাল।

অর্থনৈতিক চাহিদাঃ

নার্সারি শিল্পে চইঝাল একটি মূল্যবান উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। পাহাড়ি বা নির্গম এলাকায় চই প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে। বর্তমানে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিশেষ করে বৃহত্তর বরিশাল খুলনা ফরিদপুর অঞ্চলে চইয়ের আবাদ এবং বাজার আছে। শুকনো এবং কাঁচা উভয় অবস্থায় চই বিক্রি হয়। বর্তমানে প্রতি কেজি কাচা চইঝাল লতা ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তবে শাখা ডাল থেকে শিখড়ে ঝাল বেশি বলে এর দামও একটু বেশি। শুকনো চইয়ের দাম আরো ২-৩ গুন। একজন সাধারন কৃষক মাত্র ২-৪টি চই গাছের চাষ করে নিজের পরিবারের চাহিদা মিটাতে পারেন। অধিক ফলনের মাধ্যমে নিজের সমস্ত চাহিদাও মিটানো সম্ভব। বাংলাদেশে মরিচের বদলে চইয়ের চাষের বিস্তার ঘটিয়ে হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। অবাক করা বিষয় হল এই যে খুলনার চই দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও রপ্তানি হচ্ছে। সরকার যদি এর দিকে সুনজর দেয় তবে আমাদের দেশ এখান থেকে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে।

প্রতিক্ষণ/এডি/এসএবি

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G